বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। এ দেশে প্রচুর পরিমানে হাওর-বাওড়, নদী-নালা, বিল-ঝিল, পুকুর-জলাশয় রয়েছে। প্রচুর প্রাকৃতিক পানির উৎস থাকায় এদেশে হাঁস পালন করা অধিক সুবিধাজনক। এছাড়াও বাংলাদেশের জলবায়ু ও পরিবেশ হাঁস চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। এ দেশে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। বর্ষাকালে বাংলাদেশের প্রায় তিন চতুর্থাংশ জলমগ্ন হয়ে থাকে। এ সময় খাল-বিলে আটকা পানিতে মানুষের খাদ্য নয় এমন অনেক জলজ প্রাণী (শামুক, ঝিনুক) ও উদ্ভিদ (শৈবাল) জন্মে থাকে। এ সমস্ত জলজ প্রাণী হাঁসের অতি প্রিয় উপাদেয় খাদ্য। আবহমান কাল থেকে এ দেশের গ্রাম গঞ্জে সনাতন পদ্ধতিতে হাঁস পালন প্রচলিত আছে। বর্তমানে আধুনিক পদ্ধতিতে বেশ কিছু হাঁসের লাভজনক খামার গড়ে উঠেছে যেখান থেকে ডিম ও মাংসের চাহিদা অনেকাংশে পুরণ হচ্ছে।
এই অধ্যায় শেষে আমরা-
নদী-নালা, খাল-বিল, হাওড়-বাওড় ও অজস্র পুকুর আর জলাশয়ে সমৃদ্ধ আমাদের এ বাংলাদেশ। দেশের ভৌগলিক অবস্থা বিবেচনায় নিম্নাঞ্চলে অর্থাৎ যেখানে নদী-নালা, খাল-বিল, হাওড়-বাওড় আছে সে সব এলাকার মানুষ কম পুঁজিতে হাঁস পালন করে অনেকেই জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। আজকাল আমাদের দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য হাঁস পালন জীবিকার অন্যতম উপায়। আমাদের দেশে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে তেমনভাবে হাঁসের খামার গড়ে না উঠলেও গ্রামের কৃষকেরা প্রচলিত পদ্ধতিতে হাঁস পালন করে থাকেন।
সাধারনত হাঁস পালনে নিম্নের পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করা হয়ে থাকে । যথা:
ক) উন্মুক্ত পদ্ধতি (Open Method)
খ) অর্ধ-আবদ্ধ পদ্ধতি (Semi-intensive Method)
গ) আবদ্ধ পদ্ধতি (Intensive Method)
ঘ) হার্ডিং পদ্ধতি (Herding Method)
ঙ) লেন্টিং পদ্ধতি (Lenting Method)
শ্রেণির তাত্ত্বিক কাজ
ক) উন্মুক্ত পদ্ধতিতে হাঁস পালন
এটি হাঁস পালনের সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি। আমাদের দেশের গ্রামাঞ্চলে এ পদ্ধতিতে হাঁস পালন করা হয়ে থাকে। এ পদ্ধতিতে দিনের বেলা হাঁসগুলোকে ছেড়ে দেয়া হয় এবং নিজেদের প্রয়োজনীয় খাদ্য সংগ্রহ করে খায়। সন্ধ্যা বেলায় যখন হাঁসগুলো ঘরে ফিরবে তখন প্রতিদিন কিছু তৈরি সুষম খাবার সরবরাহ করতে হবে। সন্ধ্যা বেলায় কিছু খাবার সরবরাহ করার নিয়ম চালু রাখলে খাবার ও আরামদায়ক বাসস্থানের লোভে এরা ঘরে ফিরে আসবে। রাতে বাড়িতে নির্দিষ্ট জায়গায় আবদ্ধ করে রাখা হয়। এই পদ্ধতিতে হাঁসকে অতিরিক্ত তেমন খাবার দেয়া হয় না বললেই চলে।
এ পদ্ধতিতে বাড়ন্ত ও পূর্ণবয়স্ক হাঁস পালন করা সুবিধাজনক। যেসব অঞ্চলে পতিত জলাশয় রয়েছে এবং খালবিল বেশি সেখানে এ পদ্ধতিতে হাঁস পালন সবচেয়ে ভালো। ডিমপাড়া হাঁসগুলোকে সকাল ৯.০০ টা পর্যন্ত ঘরে আবদ্ধ করে রাখতে হয় কারণ হাঁস সকাল বেলায় ডিম পাড়তে পছন্দ করে ।
উন্মুক্ত পদ্ধতির সুবিধাসমূহ-
উন্মুক্ত পদ্ধতির অসুবিধাসমূহ-
খ) অর্ধ-আবদ্ধ পদ্ধতিতে হাঁস পালন
এই পদ্ধতিতে হাঁসগুলো রাতের বেলায় ঘরে আবদ্ধ থাকে এবং দিনের বেলায় ঘর সংলগ্ন একটি নির্দিষ্ট ফাঁকা জায়গার মধ্যে ছেড়ে দেয়া হয়। এটি তারের জাল দ্বারা ঘেরা থাকে। এ নির্দিষ্ট গন্ডিকে রেঞ্জ বা রান বলে। এ গন্ডির ভেতরে প্রতিটি হাঁসের জন্য প্রায় ১০ বর্গফুট জায়গার প্রয়োজন হয়। এ পদ্ধতি বাড়ন্ত ও প্রাপ্তবয়স্ক হাঁসের জন্য উপযোগী। রেঞ্জ বা গন্ডির ভেতরে সিমেন্ট দিয়ে বড় ধরনের পানির পাত্র তৈরি করা হয়। এখানে হাঁসগুলো সাঁতার কাটতে পারে এবং খাবার পানি খেতে পারে। প্রতিটি হাঁসকে দৈনিক ১৪০-১৬০ গ্রাম খাদ্য সরবরাহ করতে হয় ।
অর্ধ-আবদ্ধ পদ্ধতির সুবিধাসমূহ-
অর্ধ-আবদ্ধ পদ্ধতির অসুবিধাসমূহ-
গ) আবদ্ধ পদ্ধতি
এই পদ্ধতিতে পরিবেশ নিয়ন্ত্রিত ঘরে হাঁসগুলোকে সবসময় আবদ্ধ অবস্থায় রাখা হয়। বাচ্চা হাঁস (৪-৬ সপ্তাহ) পালনের জন্য এই পদ্ধতি খুবই উপযোগী। আবদ্ধ পদ্ধতি তিন ধরনের হয়ে থাকে। যেমন-
i. মেঝে পদ্ধতি
ii. খাঁচা পদ্ধতি বা ব্যাটারি পদ্ধতি
iii. তারজালির মেঝে পদ্ধতি
i. মেঝে পদ্ধতি:
এই পদ্ধতিতে হাঁসের বাচ্চাগুলো আবদ্ধ অবস্থায় মেঝেতে পালন করা হয়। এ ধরনের মেঝেতে লিটার ব্যবহার করা হয়ে থাকে। খাবার এবং পানি দিয়ে লিটার যাতে নষ্ট না হয় সেজন্য ঘরের এককোণে তারজালের উপর পানি পাত্র ও খাদ্য পাত্র রাখা হয়।
মেঝেতে হাঁস পালনের সুবিধাসমূহ-
মেঝেতে হাঁস পালনের অসুবিধাসমূহ-
ii. খাঁচা বা ব্যাটারি পদ্ধতি
খাঁচা পদ্ধতিতে হাঁসের বাচ্চাগুলো আবদ্ধ অবস্থার মাচায় পালন করা হয়। এ ধরনের বাঁচার খাদ্য ও পানি দেয়ার আলাদা ব্যবস্থা থাকে। খাবার এবং পানি দিয়ে লিটার যাতে নষ্ট না হয় সেজন্য ঘরের এককোণে তারুজ্জালের উপর পানি পাত্র ও খাদ্য পাত্র রাখা হয়। এ পদ্ধতিতে হাঁসের বাচ্চাগুলোকে খাঁচায় পালন করা হয়ে থাকে। প্রতিটি বাচ্চার জন্য ০.৭৫ বর্গফুট জারগার প্রয়োজন হয়। বাচ্চা পালনের জন্য এ পদ্ধতি খুবই সুবিধাজনক ।
খাঁচায় হাঁস পালনের সুবিধাসমূহ-
খাঁচায় হাঁস পালনের অসুবিধাসমূহ-
iii. তারের জালের মেঝেতে হাঁস পালন
এক্ষেত্রে হাঁসের বাচ্চাগুলোকে তারের জাল দিয়ে নির্মিত মেঝেতে পালন করা হয়ে থাকে। প্রতিটি বাচ্চার জন্য ০.৫-০.৭৫ বর্গফুট জায়গার প্রয়োজন হয়। এ পদ্ধতিতে ঘরের মেঝে থেকে উঁচু করে তারের জাল দেয়া হয় এবং তারের জালের ফাঁক যাতে ১.৫ বর্গ ইঞ্চির বেশি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। মাচার চারপাশে ১-২ ফুট উঁচু করে বেড়া দিতে হবে যেন হাঁসের বাচ্চা বাইরে পড়ে না যায়। এই পদ্ধতিতে হাঁস পালন করলে প্রাথমিক খরচ একটু বেশি হয়।
তারের জালের মেঝেতে হাঁস পালনের সুবিধাসমূহ-
তারের জালের মেঝেতে হাঁস পালনের অসুবিধাসমূহ-
ঘ) লেন্টিং পদ্ধতি
যে সব এলাকায় বড় বড় হাওড়-বাওড়, বিল-ঝিল থাকে সে সব এলাকায় এই পদ্ধতিতে হাঁস পালন করা হয়ে থাকে। এ পদ্ধতিতে হাওড়, বিলে ভাসমান ঘর তৈরি করে হাঁস পালন করা হয়। প্রতিটি ফ্লকে বা দলে ১০০- ২০০ টি হাঁস পালন করা হয়ে থাকে। এ পদ্ধতিতে হাঁস মুক্ত জলাশয় থেকে নিজেদের খাদ্য সংগ্রহ করে খেয়ে থাকে। তবে অল্প পরিমাণ অতিরিক্ত খাদ্য সরবরাহ করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। এই পদ্ধতিতে হাঁসের ডিম উৎপাদন ভালো হয়। হাঁসগুলো সঠিক সংখ্যায় ও সময়মত ফিরছে কিনা সে দিকে লক্ষ্য করার জন্য একজন পাহারাদার প্রয়োজন হয়।
লেন্টিং পদ্ধতির সুবিধাসমূহ-
লেন্টিং পদ্ধতির অসুবিধাসমূহ-
ঙ) হার্ডিং পদ্ধতি
বাড়ন্ত এবং পূর্ণ বয়স্ক হাঁস পালনের জন্য এ পদ্ধতি বেশ ভালো। এ পদ্ধতিতে হাঁস পালনের জন্য কোনো রকম ঘরের প্রয়োজন হয় না। হাঁসগুলোকে সবসময় গতিশীল রাখা হয় অর্থাৎ যে সমস্ত জলাশয়ে খাদ্য আছে হাঁসগুলোকে পর্যায়ক্রমে সে সমস্ত জলাশয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সারা দিন খাদ্য খাওয়ার পরে রাতের বেলা হাঁসগুলোকে কোনো একটি উঁচু জায়গায় সকাল ৯টা পর্যন্ত আটকিয়ে রাখা হয় কারণ হাঁসগুলো সকাল বেলায় ডিম পাড়ে। একটি নির্দিষ্ট এলাকায় কিছু দিন প্রাকৃতিকখাদ্য খাওয়ানোর পর অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। এ পদ্ধতিতে একজন লোক ১০০-৫০০ টি হাঁস রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারে ।
হার্ডিং পদ্ধতিতে হাঁস পালনের সুবিধাসমূহ-
হার্ডিং পদ্ধতিতে হাঁস পালনের অসুবিধাসমূহ-
সাধারণত হাঁসের বাচ্চাকে নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত তাপ দিয়ে লালন-পালন করাকে ব্রুডিং বলে। শীতকালে ৪-৫ সপ্তাহ এবং গ্রীষ্মকালে ২-৩ সপ্তাহ পর্যন্ত হাঁসের বাচ্চার ব্রুডিং করতে হয়। বাচ্চার দেহে তাপ নিয়ন্ত্রণের কলা কৌশল বৃদ্ধি পায় না বলে ব্রুডিং করতে হয়ে।
দু'ভাবে তাপ প্রদান করে হাঁসের বাচ্চা ব্রুডিং করা যায়।
ক) প্রাকৃতিক নিয়মে অর্থাৎ ক্রডিহাস/মুরগির সাহায্যে তাপ প্রদানের মাধ্যমে ব্রুডিং ।
খ) কৃত্রিম উপায়ে অর্থাৎ বৈদ্যুতিক হিটার, বৈদ্যুতিক বাল্ব, কেরোসিনের বাতি ইত্যাদির মাধ্যমে তাপ প্রদানের মাধ্যমে ব্রুডিং ।
ব্রুডিং এর সুফল-
প্রাকৃতিক নিয়মে হাঁসের বাচ্চার ব্রুডিং
গ্রামাঞ্চলে হাঁসের ডিম ফোটানোর জন্য ব্রুডি মুরগি নির্বাচন করা হয়, কারণ হাঁস ডিমে তা দেওয়ায় কম অভ্যন্ত। একটি মুরগি ১০-১৫ টি হাঁসের ডিমে তা দিয়ে বাচ্চা ফোটাতে পারে। বাচ্চা ফোটার পর প্রথমে মুরগিকে বাচ্চাসহ কয়েকদিন বন্ধ ঘরে রেখে খাবার ও পানি প্রদান করতে হবে। ৫-৭ দিন পর একটি সীমাবদ্ধ এলাকায় বাচ্চাসহ মুরগিকে ছাড়া যেতে পারে।
মুরগির সাথে বাচ্চাগুলো বাইরে ছেড়ে দেয়ার পর যদি বাচ্চাগুলো ঠাণ্ডা অনুভব করে তবে মুরগির পাখার নিচে চলে আসে এবং তাপমাত্রা নিরাশ করে। যদি পরিবেশের তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকে তবে বাচ্চাগুলো মুরগির সাথে স্বাভাবিকভাবে ঘুরে বেড়ায় ও খাদ্য গ্রহণ করে। যদি তাপমাত্রা বেশি অনুভব করে তবে বাচ্চাগুলো মুরগির সাথে গাছের ছায়ার নিচে চলে যায় এবং বেশি করে পানি গ্রহণ করতে চায়। ২-৩ সপ্তাহ পর বাচ্চার সঙ্গে মুরগি রাখার আর প্রয়োজন হয় না। তারপর থেকে বাচ্চাগুলোকে পানিতে ছেড়ে দিয়ে সাঁতার কাটার অভ্যাস করাতে হয় ।
শ্রেণির তাত্ত্বিক কাজ
ব্রুডার ঘরে বাচ্চা আনার পূর্বে ব্রুডার ঘর প্রস্তুত করতে হয়। বাচ্চা আনার পূর্বে ঘরের মেঝে, দেয়াল, বেড়া এবং উপরের সিলিং ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। জীবাণুনাশক ঔষষ যেমন ফিনাইল, আরোসান বা অন্য কোনো ভাগ জীবাণুনাশক পানির সঙ্গে মিশিয়ে ঘরের মেঝে, দেখাল, বেড়া ইত্যাদিতে ছিটিয়ে দিয়ে পরকে জীবাণুযুক্ত করতে হবে। ব্রুডার ঘর এবং ঐটিং পাতিসমূহ ৩-৪% ফিনাইল দ্রবণ দিয়ে সঠিকভাবে ঘরের দেয়ালের উপর তার জালের বেড়া থাকলে এবং জানালায় কপাট না থাকলে বাচ্চাকে শীত অথবা বৃষ্টির কবল থেকে নিরাপদ রাখার জন্য জালের সাথে চট ঝুলিয়ে দিতে হবে। চট অবশ্যই পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত হতে হবে। অন্য সময় চট উঠিয়ে রাখতে হবে যাতে বাইরের আলো-বাতাস ঘরে ঢুকতে পারে ।
ব্রুডার ঘরে যে লিটার ব্যবহার করা হবে তা রোদে ভালোভাবে শুকিয়ে বাচ্চা আনার পূর্বে মেঝেতে ৫-৮ সে.মি. পুরু করে বিছিয়ে রাখতে হবে। লিটারের উপর চট বা বস্তা বিছিয়ে তার উপর পানি পাত্র ও খাদ্য পাত্র দিয়ে ঘর প্রস্তুত রাখতে হবে। ৭৫টি বাচ্চার জন্য ১টি পানি পাত্র এবং প্রতি ৪০টি বাচ্চার জন্য ১টি খাদ্য পাত্র স্থাপন করতে হবে।
ব্রুডিং যন্ত্রপাতিসমূহ বাচ্চা আনার পূর্বে ব্রুডার ঘরে স্থাপন করতে হয়। ব্রুডার ঘরে বাচ্চা নেয়ার ১২-২৪ ঘন্টা পূর্বে থেকেই ব্রুডার জ্বালিয়ে ঘর গরম করে রাখতে হয়। বাচ্চা রাখার সময় সেডের তাপমাত্রা ২৪ থেকে ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর মধ্যে রাখতে হবে।
শ্রেণির তাত্ত্বিক কাজ
বাচ্চা ফোটার পর থেকে ৫-৬ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত বাচ্চার কাঙ্খিত পরিবেশ নিশ্চিত করাই হচ্ছে ব্রুডিং ব্যবস্থাপনা। ব্রুডিংকালে হাঁসের বাচ্চার পর্যাপ্ত যত্ন নিশ্চিত করতে হবে। এ সময় হাঁসের বাচ্চার মৃত্যুহার খুব বেশি। এই সময়ে হাঁসের বাচ্চার ঘরের তাপ, আর্দ্রতা, আলো, বায়ু চলাচল সঠিক হতে হবে। উপরোক্ত বিষয়াদি পূরণের জন্য নিম্নোক্ত ব্রুডিং যন্ত্রপাতিসমূহ ব্রুডার ঘরে স্থাপন করা প্রয়োজন হয়।
১. থার্মোমিটার স্থাপন: ব্রুডার ঘরের তাপমাত্রা সঠিক আছে কি না তা জানার জন্য ব্রুডার ঘরে থার্মোমিটার স্থাপন করতে হয়।
২. হাইগ্রোমিটার স্থাপন: ব্রুডার ঘরের আর্দ্রতা সঠিক আছে কি না তা জানার জন্য আর্দ্রতা মাপক যন্ত্র যেমন হাইগ্রোমিটার স্থাপন করতে হয়। ব্রুডার ঘরের আর্দ্রতা ৪৫-৭৫% এর মধ্যে রাখতে হয়।
৩. চিকগার্ড: ব্রুডারে বাচ্চাগুলো নিজ্ঞাণের জন্য চিকগার্ড নির্মাণ করা হয়। ব্রুডার ঘরে বাচ্চা যাতে ব্রুডার এর নিকট থেকে দূরে সরে না যার অর্থাৎ বাচ্চাগুলো যাতে প্রয়োজনীয় ভাগ পার সে জন্য প্রভার এর চার পার্শ্বে হার্ডবোর্ড দ্বারা পোলাকার বেষ্টনী তৈরি করা হয়। এই বেষ্টনীকে চিক পার্ড বলা হয়। এই চিক গার্ডের উচ্চতা কমপক্ষে ৭ ইঞ্চি হলে ভালো হয়। চিক পার্ডের মধ্যে খাবার পাত্র এবং পানি পাত্র স্থাপন করতে হবে। ৩০০ সে.মি. বা ১০ ফুট ব্যাসের ১টি চিকগার্ডে ৩০০-৪০০টি হাঁসের বাচ্চাকে স্বাভাবিকভাবে ব্রুডিং করা যায়। তবে বাচ্চা বড় হওয়ার সাথে সাথে চিক গার্ডের পরিধি বাড়ানোর প্রয়োজন হবে। এই চিকগার্ড নেটের মাধ্যমেও তৈরি হতে পারে। শীতের দিনে চিকগার্ড হার্ড বোর্ডের এবং পরমের দিনে নেটের তৈরি হওয়া ভালো। চিকগার্ডকে ব্রুডার গার্ডও বলা হয়। ৪ সপ্তাহের মধ্যে চিকার্ড সরিয়ে বাচ্চা সমস্ত ঘরে ছেড়ে দিতে হবে।
৪. ব্রুডারঃ ব্রুডার হল তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ যা যা দ্বারা ব্রুডার ঘরের তাপমাত্রা ঠিক রাখা হয়। চারটি ১০০ ওয়াট বাশ্বের সাহায্যে এক মিটার পরিধির একটি ফ্রস্টার তৈরি করে তাতে ৩০০ (তিনশত) বাচ্চা পালন করা যায়। কাঠ, টিন, বার্ডবোর্ড ইত্যাদির সাহায্যে ব্রহ্মার বানানো যায়। এক ফুট উঁচু পারার উপর শুধু কাঠ বা হার্ডবোর্ডের সাহায্যে অথবা কাঠ এবং হার্ডবোর্ডের সমন্বয়ে সহজভাবে ইলেকটিক ব্রুডার তৈরি করা যায়। ব্রুডারে ছাতার মত অংশটিকে হোতার বলে। বাহুসহ হোন্ডার হোভারের গায়ে ঝুলিয়ে রাখা হয়।
৫. খাবার পাত্র হাঁসের বাচ্চার সংখ্যা অনুযায়ী ব্রুডার ঘরে সঠিক ভাবে খাবার পাত্রগুলো স্থাপন করতে হবে। প্রথম ২-৩ দিন কাগজের উপরে, থালা বা ট্রেতে খাবার দিতে হয়। তারপর থেকে খাবার পাত্রে খাবার দিতে হয়। ২ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত প্রতিটি বাচ্চার জন্য এক লিনিয়ার ইঞ্চি জায়গার দরকার হয়। ২-৬ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত প্রতি বাচ্চার জন্য দিতে হয় ১.৫ সিনিয়ার ইঞ্চি ।
৬. পানি পাত্রঃ ব্রুডার ঘরে খাবার পাত্রের চেয়ে পানি পাত্র স্থাপনের প্রয়োজন হবে অর্ধেক। অর্থাৎ পানি পাত্রের জায়গা হবে খাবার পাত্রের অর্ধেক।
৭. লিটার : ঘরের মেঝেতে যে তুষ বা কাঠের গুঁড়া বিছানা হিসেবে দেয়া হয় তাকে লিটার বলে। লিটার মেঝেতে ৫-৮ সে.মি. পুরু করে বিছিয়ে দিতে হবে। ভিজা, স্যাঁতস্যাঁতে ও ময়না হলে লিটার পাল্টিয়ে দিতে হবে।
শ্রেণির তাত্ত্বিক কাজ
হাঁসের বাচ্চার সুষ্ঠু বৃদ্ধির জন্য পরিমিত তাপমাত্রার প্রয়োজন। তাপমাত্রার অতিরিক্ত কম বা বেশি হলে বাচ্চা অসুস্থ হয়ে যায়। ব্রুডার ঘরের তাপমাত্রা নির্ণয় করার জন্য থার্মোমিটার থাকে। হাঁসের বাচ্চাকে গ্রীষ্মকালে ২-৪ সপ্তাহ এবং শীতকালে ৪-৬ সপ্তাহ ব্রুডিং করা হয়। ব্রুডিংকাল অত্যন্ত সংবেদনশীল বিধায় গভীর পর্যবেক্ষণে রাখতে হয়।
ব্রুডার ঘরে নিম্নলিখিতভাবে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা হয়-
শীতকালে ১০০টি বাচ্চার জন্য ১০০ ওয়াট বা প্রয়োজনবোধে তদূর্দ্ধ ওয়াটের বাল্বের ব্যবস্থা করতে হয়। হোভার উঁচু নিচু করে তাপমাত্রা কমানো বাড়ানো যায়। গরমকালে ৩০০টি বাচ্চা পালনের জন্য হোভারের চার কোণায় চারটি ৬০ ওয়াট এর বাল্ব দিয়েই ব্রুডিং করা যায়।
১/২ ডিগ্রি তাপমাত্রা কম বা বেশি হলে বাচ্চার বৃদ্ধিতে তেমন অসুবিধা হয় না। ব্রুডিং এর পর বাচ্চা পরিবেশের তাপমাত্রার সাথে সহজেই খাপ খাইয়ে নিতে পারে। যে অপমাত্রার বাচ্চাগুলো ব্রুডার ঘরে আরাম অনুভব করবে সে তাপমাত্রাতেই ঘর গরম রাখতে হবে। তাই ঘরে থার্মোমিটার না থাকলেও বাচ্চার অবস্থান দেখে ব্রুডার ঘরের তাপমাত্রা বোঝা যায়। নিচে তা বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
১. ব্রুডার ঘরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হলে বাচ্চাগুলো ব্রুডার, হিটার বা তাপের উত্স থেকে দূরে অবস্থান করবে এবং মুখ হা করে শ্বাস নিতে থাকবে এবং হাঁপাতে থাকবে। নিচের ছবিতে চিত্রটি দেখানো হল-
এ সময়ে বাচ্চাগুলো খাদ্য গ্রহণ কমিয়ে দেয়। এ অবস্থায় ব্রুডার-এর মধ্যে বাচ্চাগুলোর জন্য আরামদায়ক তাপমাত্রা সৃষ্টির লক্ষ্যে তাপমাত্রা কমিয়ে দিতে হবে। ব্রুভারে যদি বৈদ্যুতিক বাদ ব্যবহার করা হয় তা হলে বাশ্বের সংখ্যা কমিয়ে দিয়ে অথবা হোভার উঁচু করে তাপমাত্রা কমানো যায়।
২. ব্রুডার ঘরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেরে কম হলে বাচ্চাগুলো ব্রুডার হিটার এর নিকটে ঘনভাবে জড়ো হয়ে থাকবে এবং চিচি শব্দ করে ডাকতে থাকে। অনেক সময় বাচ্চাগুলো হোতারের নিচে গাদাগাদি করে জম হতে গিয়ে চাপা পড়ে বা শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে মারা যেতে পারে। তাছাড়া বাচ্চাগুলো হোভারের নিচে থাকার কারণে পানি ও খাবার না খেয়ে দুর্বল হয়ে যায়। এ অবস্থায় তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য ব্রুডারে বাষ্পের সংখ্যা বাড়াতে হবে। ঘরে যাতে ঠান্ডা বাতাস না ঢুকে সেজদা নেট লাগানো অংশে ভারী পর্দা লাগানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
৩. ব্রুডার ঘরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক বা পরিমিত পরিমাণে থাকলে বাচ্চাগুলো মরে স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করে এবং ঠিকমত খাদ্য গ্রহণ ও পানি গ্রহন করে।
শ্রেণির তাত্ত্বিক কাজ
ব্রুডার ঘরে খাবার পাত্র ও পানি পাত্র বাচ্চার সংখ্যার উপর ভিত্তি করে ঘরে স্থাপন করতে হবে।
খাবার পাত্র স্থাপন
ব্রুডার ঘরে বাচ্চাগুলোকে প্রথম ১-২ দিন খবরের কাপক্ষের উপর এবং পরবর্তীতে ২ সপ্তাহ পর্যন্ত ট্রেতে করে খাদ্য সরবরাহ করা হয়। ১০০ টি বাচ্চা ১টি ট্রেতে খেতে পারে এমন ট্রে ঘরে স্থাপন করতে হবে। অর্থাৎ ১০০টি বাচ্চার জন্য ১০০ লিনিয়ার ইঞ্চি বিশিষ্ট ট্রে ব্যবহার করতে হবে। ২ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত খাদ্য প্রদানের জন্য ব্যবহার করা যায়। তারপর খাবার পাত্র ব্যবহার করতে হয়।
প্রতিটি হাঁসের জন্য বয়স অনুযায়ী খাবার পাত্রের জায়পার পরিমাণ
ডিম থেকে ফোটার পর বাচ্চা ৭২ ঘন্টা পর্যন্ত কোনো খাবার না খেরেই থাকতে পারে। এজন্যেই একদি বয়সের বাচ্চা (Day old chick) এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সহজেই পরিবহন করা যায়।
পানি পাত্র স্থাপন
পানি পাত্রের জায়গা হবে খাবার পাত্রের অর্ধেক। হাঁসের বেলায় পানি সরবরাহের পর খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। এক্ষেত্রে পানি পাত্রের গভীরতা কমপক্ষে ৩ (তিন) ইঞ্চি হতে হবে যাতে হাঁস মাথা ঢুকিয়ে পানি পান করতে পারে। তা না হলে হাঁসের খাদ্য গ্রহণ অনেকটা কমে যায়।
বয়স অনুযায়ী পানি পাত্রের জায়গার পরিমাণ নিম্নরূপ:
শ্রেণির তাত্ত্বিক কাজ
বাচ্চা আবাসনের পূর্বেই হার্ডবোর্ড বা তারের নেট দিয়ে চিক পার্ড তৈরি করে মেঝেতে পরিমাণমত (২-৩ ইঞ্চি পুরু করে) তুব/কাঠের ভূষি বিছিয়ে এর উপর খবরের কাগজ কয়েক স্তরে অথবা পাতলা চট বিছিয়ে নিতে হবে। এ কাগজ দিনে একবার বদলিয়ে দিতে হবে। পাতলা চট দৈনিক একবার পরিষ্কার করে শুকিয়ে পুনরায় বিছাতে হবে।
বাচ্চা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বা হ্যাচারি থেকে বাচ্চা সংগ্রহ করে এনে পূর্ব থেকে প্রস্তুতকৃত ব্রুডার ঘরে ৪৫ মিনিট বাচ্চাগুলোকে বাক্সের মধ্যেই রাখতে হবে। কারণ অন্য পরিবেশ থেকে আনার পর ব্রুডারের পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে কিছু সময় লাগবে। এ সময় পর কিছু বাচ্চাকে ব্রুডারে ছাড়তে হবে। পনেরো মিনিট পর সবগুলো বাচ্চা ব্রুডারে ছাড়তে হবে। এতে পরের বাচ্চাগুলো পূর্বের বাচ্চাগুলোকে অনুসরণ করে দ্রুত পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারবে। চিকগার্ডের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পানি পাত্র ও খাদ্য পাত্র স্থাপন করতে হবে।
পানি পাত্রগুলো দিনে ২-৩ বার পরিষ্কার করতে হবে। সপ্তাহে একবার পানি পাত্রগুলো জীবাণুনাশক ঔষধ, আইওসান দিয়ে ধুইয়ে নিতে হবে। বাচ্চা বড় হওয়ার সাথে চিকগার্ডের পরিধি বৃদ্ধি করে ৪-৫ সপ্তাহের মধ্যে সারা ঘরে লিটার বিছিয়ে বাচ্চাগুলোকে ছেড়ে দিতে হবে। সেই সাথে সমস্ত ঘরে প্রয়োজনীয় সংখ্যক খাদ্য পাত্র ও পানি পাত্র স্থাপন করতে হবে।
স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ রক্ষার্থে প্রতিদিন ঘরের লিটারে আচঁড়া দিয়ে নেড়ে উল্টে-পাল্টে দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। লিটার ভিজে গেলে তা সাথে সাথে পরিবর্তন করে সেখানে শুকনা লিটার বিছিয়ে দিতে হবে।
বাচ্চা বড় হওয়ার সাথে সাথে ঘরের পর্দাগুলো খুলে দিতে হবে যাতে ঘরের মধ্যে প্রয়োজনমত বায়ু চলাচল করতে পারে যা লিটার শুকনা রাখতে সাহায্যে করে ।
শীতকালে ৪-৫ সপ্তাহ এবং গ্রীষ্মকালে ২-৩ সপ্তাহ কৃত্রিম উপায়ে তাপ দেয়ার প্রয়োজন হতে পারে। দুই সপ্তাহ বয়স থেকে হাঁসের বাচ্চাকে পানিতে চড়ার অভ্যাস করাতে হবে।
শ্রেণির তাত্ত্বিক কাজ
জীবাণুনাশক: যে সব ঔষধ বা রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করলে জীবাণু/রোগ জীবাণু মারা যায় তাই হলো জীবাণুনাশক। যথা; ফিনাইল, আয়োসান, স্যাভলন, ডেটল, সুপারসেপ্ট ইত্যাদি। জীবাণুনাশক ঔষধ ব্যবহারের সাথে খামারে স্বাস্থ্য সম্মত পরিবেশ বজায় রাখার জন্য উন্নত ব্যবস্থাপনা অনুসরণ করা দরকার । জীবাণুনাশক ঔষধ উন্নত ব্যবস্থাপনার বিকল্প নয় ।
কখন জীবাণুনাশক ঔষধ ব্যবহার করতে হয়?
একটি আদর্শ জীবাণুনাশক নিম্নলিখিত গুণসম্পন্ন হতে হবে-
আজকাল বাজারে অনেক ধরনের জীবাণুনাশক ঔষধ কিনতে পাওয়া যায়। বিভিন্ন পদ্ধতিতে হাঁসের খামারকে রোগ জীবাণুমুক্ত রাখা যায় কিন্তু সব পদ্ধতি সব ক্ষেত্রে সমভাবে কার্যকরী নয়। প্রতিটি জীবাণুনাশক ঔষধ তৈরির কোম্পানি কর্তৃক দেয়া নির্দেশিকা অনুসারে ব্যবহার করতে হবে। কোম্পানি কর্তৃক নির্দেশনা অনুসরণ না করলে খামার রোগ জীবাণুমুক্ত হবে না বরং খামারে বিদ্যমান রোগ জীবাণুগুলো অধিক শক্তিশালী হয়ে খামারের হাঁসগুলোর মধ্যে রোগ সৃষ্টি করতে পারে। জীবাণুনাশক ঔষধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধক শক্তি সম্পন্ন বিভিন্ন রোগ জীবাণু পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে জনস্বাস্থ্যকে হুমকির সম্মুখীন করে তুলবে।
এদেশে বহুল ব্যবহৃত কতকগুলো রোগ জীবাণুনাশক ঔষধের নাম, ব্যবহার বিধি নিম্নের ছকে দেওয়া হলো-
জীবাণুনাশক ঔষধ ব্যবহারে সতর্কতাসমূহ-
ঘর পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করতে নিম্নলিখিত ধাপগুলো অনুসরণ করতে হবে-
শ্রেণির তাত্ত্বিক কাজ
বাসস্থান এবং এর আশেপাশের স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ বজায় রাখতে নিম্নলিখিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে-
শ্রেণির তাত্ত্বিক কাজ
বর্তমান বিশ্বে খামার সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে একটি বহুল আলোচিত শব্দ বায়োসিকিউরিটি। খামার স্থাপনের পরিকল্পনা থেকে শুরু করে খামার পরিকল্পনা, উৎপাদন ও উৎপাদিত দ্রব্যের বাজারজাতকরণ, এমনকি ভোক্তার কাছে উৎপাদিত দ্রব্য পৌছে দেওয়া পর্যন্ত প্রক্রিয়াগুলো আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত তথা জীবাণুমুক্ত ও অন্যান্য ক্ষতিকর উপাদানের প্রভাবমুক্তভাবে সম্পন্ন করাই জীব নিরাপত্তা ব্যবস্থা ।
জীব নিরাপত্তা ব্যবস্থার উদ্দেশ্য-
নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর প্রতি খেয়াল রাখলে জীব নিরাপত্তা ব্যবস্থা সঠিকভাবে মেনে চলা যাবে :
১. খামারের স্থান নির্বাচন :
২. রোগ জীবাণুর উৎস ও প্রতিরোধের উপার নির্বাচন :
রোগ জীবাণুর উৎসসমূহঃ
রোগ বিস্তার প্রতিরোধের উপায় :
(ক) যাতায়াত নিয়ন্ত্রণঃ
খ) খামারে অবাধ প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ :
গ) চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীর তৎপরতা :
৩. নিয়মিত টিকা প্রয়োগ :
খামারে হাঁসকে টিকা প্রয়োগের মাধ্যমে রোগ-মুক্ত রাখা একটি আধুনিক, জটিল ও অত্যন্ত বিজ্ঞানসম্মত প্রক্রিয়া। আধুনিককালে পোল্ট্রি শিল্পের সাফল্য সময়মত ও সফলভাবে টিকা প্রয়োগ ছাড়া সম্ভব নয়। তাই টিকা প্রয়োগকালে সর্বোচ্চ সতর্কতা পালন করা বাঞ্ছনীয়।
টিকা প্রদানের সময় নিম্নলিখিত বিষয়গুলো মেনে চলতে হবে-
৪. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা :
৫. নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা :
৬.স্বাস্থ্য সম্মত ও আদর্শ খাদ্য প্রদান :
বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া (যেমন- সালমোনেলোসিস) ও ছত্রাকজনিত (যেমন- এসপারজিলোসিস, আফলা টক্সিকোসিস) রোগের জীবাণু খামারের মাধ্যমে পরিবাহিত হয়। সত্যিকারের ভালো খাবার বলতে জীবাণুমুক্ত ও সুষম খাদ্যের প্রয়োজনীয় উপাদানসমূহের সমন্বয়ে গঠিত খাদ্যকে বুঝায়।
৭. হাঁসের ঘরের স্বাস্থ্যসম্মত ব্যবস্থাপনা :
ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস ধ্বংসকারী জীবাণুনাশক অপেক্ষাকৃত উষ্ণ তাপমাত্রাতেই বেশি কার্যকর। তাপমাত্রা ৭০ ডিগ্রি ফারেনহাইট এর উপরে এবং আর্দ্রতা ৭৫% এর উপরে থাকলে ফরমালডিহাইড গ্যাস সবচেয়ে কার্যকর।
ক) ক্লোরক্স (সোডিয়াম হাইপো ক্লোরাইড দ্রবণ): ১ কন্টেইনার ক্লোরক্স দিয়ে ৮০ লিটার জীবাণুনাশক দ্ৰবণ তৈরি করা যায়। বাঁশের তৈরি হাঁসের ঘরের মেঝে, চালা ইত্যাদি জীবাণুযুক্ত করার জন্য ক্লোরক্স খুবই কার্যকরী।
খ) ভায়োডিন (আয়োডিন দ্রবণ) : ১ বোতল ভায়োডিন ১০% সলিউশন দিয়ে ৫ লিটার জীবাণুনাশক দ্রবণ তৈরি করা যায়।
গ) চুন দিয়ে মাচার নিচের মাটি জীবাণুমুক্ত করা খুবই জরুরি। ১০০-২০০ হাঁস পালন উপযোগী একটি ঘরের মাঁচার নিচের মাটি জীবাণুমুক্ত করার জন্য ২০ কেজি পাউডার চুন ছিটিয়ে মাটির সাথে ভালোভাবে মিশাতে হবে।
৮. বিশুদ্ধ খাবার পানি এবং পানি পাত্রের সঠিক ব্যবস্থাপনা :
৯. নতুন ব্যাচের ব্যবস্থাপনা :
পুনরায় হাঁস বা বাচ্চা তোলার পূর্বে ঘর এবং যন্ত্রপাতি ব্যবহার উপযোগী হয়েছে কিনা যাচাইয়ের জন্য নিম্নবর্ণিত চূড়ান্ত বা বাচ্চা তোলার পূর্বে ঘর এবং যন্ত্রপাতি ব্যবহার উপযোগী হয়েছে কিনা যাচাইয়ের জন্য নিম্নবর্ণিত পর্যবেক্ষণ প্ৰয়োজন-
শ্রেণির তাত্ত্বিক কাজ
পারদর্শিতার মানদণ্ড:
ক) ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই)
(খ) প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি :
(গ) প্রয়োজনীয় কাঁচামাল (Raw materials)
সাফল্যজনকভাবে হাঁস পালন করতে হাঁসের ঘরের বিভিন্ন প্রকার যন্ত্রপাতি স্থাপন করতে হয়। এ ক্ষেত্রে খাদ্যপাত্র, পানি পাত্র, থার্মোমিটার, ব্রুডার, ফ্যান, বাল্ব ইত্যাদি হাঁসের সংখ্যা অনুসারে সঠিক সংখ্যায় উপযুক্ত স্থানে স্থাপন করা হয়, যাতে ঘরের পরিবেশ স্বাস্থ্যসম্মত থাকে ।
কাজের ধারাঃ
১) সহজে আলো বাতাস চলাচল করতে পারে এমন একটি ঘর নির্বাচন কর ।
২) ঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও জীবানুমুক্ত করে নাও ৷
৩) মেঝেতে লিটার স্থাপন কর ।
৪) বাচ্চার সংখ্যা অনুসারে মেঝেতে ব্রুডার স্থাপন কর ।
৫) ব্রুডারের চারদিকে ঘিরে চিকগার্ড স্থাপন কর ৷
৬) ব্রুডার গার্ডের কেন্দ্রস্থলে ঘরের সিলিংয়ের সাথে হোভার ঝোলাতে হবে। ব্রুডার গার্ড ও হোভারের দূরত্ব হবে ২-৩ ফুট ।
৭) হোভারের সাথে ব্রুডার হিটার (বাল্ব, গ্যাস, বার্নার ইত্যাদি) সংযুক্ত কর। ৩০০ বাচ্চার জন্য ১০০ ওয়াটের তিনটি বাল্ব স্থাপন কর ।
৮) হোভারের নিচে লিটারের উপর খবরের কাগজ বিছাও ৷
৯) খবরের কাগজের উপর প্রয়োজন অনুযায়ী খাদ্য পাত্র ও পানি পাত্র স্থাপন কর ৷
১০) খাদ্য পাত্র হাঁসের পিঠ সমান উচ্চতায় স্থাপন কর ।
১১) পানি পাত্র এমনভাবে স্থাপন কর যেন হাঁস এর নিচ দিয়ে সহজে যাতায়াত করতে পারে। অর্থাৎ গলা সমান উচ্চতায় ঝুলিয়ে দাও ৷
১২) হাঁসের বুক সমান উচ্চতায় থার্মোমিটার ঝুলিয়ে দাও ।
১৩) খোলামেলা ঘরের সমস্ত ফাঁকা স্থান পর্দা দ্বারা ঢেকে দাও ।
সাবধানতাঃ
১) "Safety First" কথাটি সবসময় মাথায় রাখতে হবে।
২) চিকগার্ড গোলাকার করে স্থাপন করতে হবে।
৩) সাবধানে যন্ত্রপাতি ব্যবহার কর যেন নষ্ট না হয়।
৪) হাঁসের সংখ্যা ও বয়স অনুসারে খাদ্য পাত্র ও পানি পাত্র স্থাপন করতে হবে।
পারদর্শিতার মানদণ্ড:
(ক) ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই)
(খ) প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি :
(গ) প্রয়োজনীয় কাঁচামাল (Raw materials)
কাজের ধারা:
ক) সহজে আলো বাতাস চলাচল করতে পারে এমন একটি ঘর নির্বাচন কর ।
খ) ঘরটি ভালভাবে পরিষ্কার কর।
গ) জীবাণুনাশক দিয়ে জ্বরটি ভালভাবে জীবানুমুক্ত কর ।
ঘ) গল্পটি শুকানোর পর মেঝেতে এক লিটার ৩-৪ ইঞ্চি পুরু করে বিছিয়ে দাও ।
ঙ) ঘরটির সুবিধাজনক স্থানে একটি ব্রুডার স্থাপন কর।
চ) বাচ্চার সংখ্যানুসারে ব্রুভারের চতুর্দিকে প্রয়োজনীয় দূরত্বে চিকগার্ড স্থাপন কর ।
ছ) চিকগার্ডের ভেতরে পিটারের উপর পেপার বিছিয়ে দাও ।
জ) পেপারের উপর প্রয়োজন অনুযায়ী খাবার পাত্র ও পানি গাত্র স্থাপন কর।
ঝ) থার্মোমিটার ও হাইগ্রোমিটার বাচ্চার গলার সমান উচ্চতায় ঝুলিয়ে দাও।
ঞ) বাচ্চা ছাড়ার ১২ ঘন্টা পূর্বে ব্রুডার চালু করে থার্মোমিটার ও হাইগ্রোমিটারের সাহায্যে তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা পরিমাপ কর ।
ট) প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা উঠলে চিকগার্ডের ভেতরে একদিনের বাচ্চা ছেড়ে দাও ।
ব্রুডিংকালে তাপমাত্রা কম বেশি হলে বাচ্চার অবস্থান নিমরূপ লক্ষ্য করা যায়। এরকম হলে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ কর।
ঠ) ব্রুডিংকালে বাচ্চাকে তালিকা মোতাবেক প্রয়োজনীয় ষ্টার্টার রেশন ও বিশুদ্ধ পানি পরিবেশন ক।
ড) নির্ধারিত তালিকা মোতাবেক ঔষধপত্র ও টিকা প্রদান করো।
ঢ) বাচ্চা অসুস্থ হলে প্রয়োজেনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা নাও ।
ণ) বাচ্চার বৃদ্ধি যথাযথ কি না তা খেয়াল রাখ এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করো ।
ত) বাচ্চা বড় হলে প্রয়োজন অনুসারে চিকগার্ডের দূরত্ব বাড়িয়ে দাও এবং পাঁচ সপ্তাহ পর ব্রুডার এবং চিকগার্ড সরিয়ে ফেল।
থ) এরপর বাচ্চাকে গ্রোয়ার শেডে স্থানা করো।
দ) সকল তথ্য রেকর্ড শীট ও রেজিস্ট্রারে লিপিবদ্ধ করো।
সতর্কতাঃ
১) লিটার ভিজে গেলে দ্রুত সরিয়ে নতুন লিটার দিতে হবে।
২) পানি পাত্র প্রতিদিন জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।
৩) টিকাদান কর্মসূচী সঠিকভাবে অনুসরণ করতে হবে।
পারদর্শিতার মানদণ্ড
(ক) ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই)
(খ) প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি
গ) প্রয়োজনীয় কাঁচামাল ( Raw materials)
কাজের ধারাঃ
১) বিশ্বস্থ উৎস হতে জীবাণুনাশক সংগ্রহ কর।
২) নিরাপত্তামূলক পোষাক (পিপিই) পরিধান করে নাও।
৩) ফরটি ঝাড়ু দিরে ভালোভাবে পরিস্কার করে নাও।
৪) নির্দেশিত পরিমান পানি একটি বালতিতে নাও ।
৫) নির্দেশিত যাত্রায় জীবাণুনাশক ঐ পানিতে মেশাও।
৬) মিশ্রণটি ভালোভাবে নাড়াচাড়া কর।
৭) তারপর জীবাণুনাশক মিশ্রিত পানি স্প্রে মেশিনে তোল ।
৮) এবার ঘরের মেঝে এবং দেয়ালে জীবাণুনাশক স্প্রে কর ।
সতর্কতাঃ
১) জীবাণুনাশক অবশ্যই মাত্রা মোতাবেক মিশাতে হবে।
২) জীবাণুনাশক যেন শরীরে না লাগে ও নিশ্বাসে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
১. কয়টি পদ্ধতিতে হাঁস পালন করা হয়?
২. রেঞ্জ বা রান কী?
৩. কয়েকটি জীবাণুনাশকের নাম লেখ ।
৪. ব্রুডিং কী?
৫. লেষ্টিং পদ্ধতিতে প্রতিটি ফ্লকে কতটি হাঁস থাকে?
৬. ১ম সপ্তাহে ব্রুডার ঘরের তাপমাত্রা কত ডিগ্রি রাখতে হবে?
১. লেন্টিং পদ্ধতির সুবিধাসমূহ লেখ।
২. মেঝেতে হাঁস পালনের সুবিধাগুলো লেখ।
৩. বয়স অনুযায়ী ব্রুডার ঘরের তাপমাত্রা লেখ ।
৪. "অল ইন অল আউট” পদ্ধতি সংক্ষেপে দেখ ।
৫. ব্রুডিং কেন করা হয়?
১. হাঁস পালনের পদ্ধতিগুলো আলোচনা করো ।
২. থার্মোমিটার ছাড়া ব্রুডার ঘরে স্বাভাবিক তাপমাত্রা আছে কি না কীভাবে তা বোঝা যায় বর্ণনা করো ।
৩. বাচ্চা উঠানোর আগে ব্রুডার ঘর প্রস্তুতকরণ সম্পর্কে বিস্তারিত লেখ ।
৪. হাঁসের ঘর জীবাণুমুক্ত করার ধাপগুলো আলোচনা করো ।
৫. বাসস্থান এবং এর পারিপার্শ্বিকের স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ বাজায় রাখার কৌশল লেখ ।
আরও দেখুন...